শরীরের নানা স্থানে নানা রকম ব্যথা, ব্যথা সর্বদা থাকে না ও একস্থানে স্থির হয়ে থাকে না। |
ঠাণ্ডা বা ঠাণ্ডা বাতাসে অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা। |
গায়ের জামা খুললে যখন শরীরে ঠান্ডা বাতাস লাগে তখন অত্যন্ত চুলকায়, নিম্নাঙ্গে বেশী চুলকায়। |
মাংস খেলে চুলকানি ও ঢেঁকুর উদগার বৃদ্ধি। |
অবিরত শুষ্ক কাশি, কাশির সাথে অসাড়ে প্রস্রাব হয়ে যায়। |
ইউরোপের অনাবাদী, পতিত, গোচারণ ভূমিতে হয়, গুল্ম জাতীয় গাছ লম্বায় 3 থেকে 4 ফুট, পাতার কিনারা ঢেউ খেলানো, এর তাজা মূল সংগ্রহ করে ওষুধ প্রস্তুত হয়।
উপযোগিতা — টিউবারকুলার ধাতু—দেহের চামড়ার ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী গুলোতে অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা (উত্তেজনা বেশী) এখন লোকদের অসুখে উপযোগী।
খোলা বাতাস একদম সহ্য হয় না-(খোলা বাতাস লেগে) গলা বসে যায় বা সন্ধ্যাবেলায় বাড়ে। ঠান্ডা বাতাস লেগে পরিবর্তিত হয়।
গলার মধ্যে সুড়সুড় করে শুকনো বিরক্তি কর কাশি হতে থাকে, শুকনো কাশি, কাশতে কাশতে ক্লান্ত হয়ে পরে, অনবরত কাশতে থাকে—
আবহাওয়ার পরিবর্তনে বা গৃহের পরিবর্তনে কাশি বেড়ে যায়। (ফস, স্পঞ্জিয়া) সন্ধ্যায় শুলে গলায় ছোয়া লাগলে বা চাপ দিলে, বাঁ দিকে শুলে (ফ), সামান্য ঠান্ডা বাতাস শ্বাস নিলে কাশি বেড়ে যায়। বিছানার চাদরে মাথা ঢেকে দেহ গরম করতে চায়, কাশলে সামান্য শ্লেম্মা ওঠে বা একেবারেই ওঠে না।
ঠান্ডা বাতাসে কাশি বাড়ে অথবা কোন কিছুর মাধ্যমে গৃহীত শ্বাসবায়ুর পরিমাণ ও দ্রুততার শ্বাস নিতে হলে কাশি বেড়ে যায় (যেমন উনুনের ধোয়া)।
গলায় যেন দলা মত কিছু আটকে আছে এই অনুভূতি হয়—কিছু গিললে ঐ দলা যেন নীচে নেমে যায় কিন্তু পরক্ষণেই আবার উঠে আসে। কাশতে গেলে বায়ুনালী ও স্বরযন্ত্রে ঘা হওয়ার মত অনুভূতি (কষ্টি), কাশি দিলে অসাড়ে প্রস্রাব হয়ে যায় (কষ্টি, পালস, সাইলি)।
উদরাময়—খুব সকালে দেখা দেয়, ভোর 5টা হতে সকাল 10টা অবধি বৃদ্ধি (এলোজ, নেট-সা, পডো, সাল)-মলত্যাগে কোন বেদনা থাকে না, প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ যুক্ত উদরাময় হঠাৎ বেগ আসে সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়তে বাধ্য হয়।
চর্ম লক্ষণ — দেহের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি ঠান্ডায় চুলকানি বাড়ে, গরমে উপশম, জামা কাপড় ছাড়ার সময়, গা খালি রাখলে, ঠান্ডা বাতাস লাগলে চুলকানি বাড়ে (হিপার, নেট-সা, ওলিয়েন্ডার)।
সম্বন্ধ—তুলনীয় = বেল, কষ্টি, ড্রসেরা, হায়োস, ফস, স্যাঙ্গুইনে, সাল।
বৃদ্ধি – ঠান্ডায় বা ঠান্ডা বাতাসে, শুয়ে থাকলে (হায়োসা)।
উপশম — গরমে, ঠান্ডা বাতাস যাতে না লাগে সেই জন্য মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখে এতে উপশম হয়।
শক্তি – ৩ হতে ৬ শক্তি (বোরিক)।
ঠান্ডা বাতাস লেগে বায়ুনলী ও শ্বাস যন্ত্রে উত্তেজনা বশতঃ কাশি হলে ব্যবহার্য [Under wood] ।
শ্বাসতন্ত্রের রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
বেদনাই হইল ইহার বৈশিষ্ট্য। এই বেদনা বহুসংখক এবং বিবিধ প্রকারের। ইহার বেদনা একস্থানে নিবদ্ধ থাকে না এবং কোন স্থানে নিরন্তর স্থিতিশীল নহে। গলদেশের অভ্যন্তরে নিরন্তর সুড়সুড় করিতে থাকে এবং তজ্জন্য কাশি হয়। এই প্রকার সুড়সুড়ি বায়ুনলী যে স্থানে দুই শাখায় বিভক্ত হইয়াছে ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়া থাকে। গলদেশের মধ্যে স্পর্শ করিলে কাশির সৃষ্টি হয়। অতি সামান্য মাত্রায় শীতল বাতাসের সংস্পর্শে বৃদ্ধি;এইজন্য সমগ্র শরীর এবং মস্তক শয্যাবস্ত্র দ্বারা আবৃত করিলে যাবতীয় কাশি থামিয়া যায়। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্রাব রিউমেক্স কমাইয়া দেয় এবং তৎসঙ্গেই কণ্ঠনলী এবং শ্বাসনলীর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীসমূহের অনুভূতিশক্তি বর্ধিত করে। চর্মের উপর ইহার ক্রিয়া বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, এই ক্রিয়ার প্রভাবে তীব্র চুলকানির সৃষ্টি হয়। লসীকা গ্রন্থিগুলির বিকৃদ্ধি এবং উহাদের স্রাবের বিপর্যয়।
পাকস্থলী —জিহ্বার কিনারাগুলি হাজাকর;জিহ্বা প্রলেপযুক্ত;উদরের উধবভাগে কঠিন পদার্থ রহিয়াছে এইরূপ অনুভূতি। হিকা মুখ দিয়া জল উঠা, বমনোদ্বেগ; মাংস খাইতে পারে না; ইহা হইতে উদগারের এবং কয়নের সৃষ্টি হয়; অত্যধিক পরিমাণে সুরা পানের ফলে পান্ডুরোগ। পুরাতন পাকস্থলী প্রদাহ; উদরের উধর্বভাগে কনে ব্যথা এবং বক্ষঃস্থলে তীরবিদ্ধবৎ বেদনা; ইহা গলদেশের অভ্যন্তর ভাগের দিকে প্রসারিত হয়,নড়াচড়ায় অথবা কথা বলায় বৃদ্ধি। আহারান্তে বাম স্তনে বেদনা; পেট ফাঁপা।
শ্বাসযন্ত্র – নাসিকা শুষ্ক। গলার অভ্যন্তর ভাগে সুড়সুড়ি হইতে কাশির সৃষ্টি। নাসিকা এবং শ্বাসনলী হইতে প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মা নির্গমন। শুষ্ক, বিরক্তিকর কাশি, ইহাতে নিদ্রার ব্যাঘাত হয়। প্রচাপনে, কথা বলায়, বিশেষতঃশীতল বায়ু নিঃশ্বাসরূপে গ্রহন করিলে এবং রাত্রিতে বৃদ্ধি। পাতলা, জলবৎ, ফেনাযুক্ত গায়ের মুখ ভর্তি হইয়া বাহির হইতে থাকে; পরে চটচটে এবং দড়ির ন্যায় শ্লেম্মা নির্গত হয়। কণ্ঠনলী এবং শ্বাসনলীর ছাল উঠাবৎ ছনছনে বেদনা। বক্ষের অস্থির পশ্চাৎদিকে টাটানিব্যথা, বিশেষতঃ বাম দিকে, বাম স্কন্ধপ্রদেশে। কাস্থির নিচে টাটানিব্যথা। গলার মধ্যে পিন্ডবৎ অনুভূতি।
মল – বাদামী রঙের, জলবৎ মল, অতি প্রত্যুষে, উদরাময়, তৎসহ কাশি এবং মলের বেগ তাহাকে শয্যা হইতে তাড়া দিয়া উঠাইয়া দেয়। যক্ষ্মারোগের পরিণত অবস্থাতে ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ। (সিনেগা; পালসেটিলা; লাইকোপোডিয়াম; আর্সেনিক) মলদ্বারে চুলকানি, তৎসহ সরলান্ত্রে যেন একটি কাঠি রহিয়াছে এইরূপ অনুভূতি। অর্শ।
চামড়া — চর্মে প্রচন্ড চুলকানি, বিশেষতঃ নিম্নভাগের প্রত্যঙ্গাদিতে; পোশাক খুলিলে বা গাত্রবস্ত উন্মোচন করিলে যখন ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে আহ্মে তখনই বৃদ্ধি। আমবাত; কন্ডুয়ন সহ বিদ্যমান সংক্রামক গুটিকা রোগ।
অবস্থান্তর সংঘটক – সন্ধ্যাকালে, শীতল বায়ু নিঃশ্বাসের সহিত গ্রহণ করিলে, বৃদ্ধি, বাম বক্ষঃস্থলে বৃদ্ধি; বস্ত্রাচ্ছাদন উন্মোচন করিলে বৃদ্ধি।
সম্বন্ধ – তুলনীয়ঃ কষ্টিকাম; সালফার; বেল। রিউমেক্সে ক্রাইসোফ্যানিক এসিড আছে যাহার সঙ্গে ইহার চর্মলক্ষণাবলীর সাদৃশ্য রহিয়াছে।
শক্তি – ৩য় হইতে ৬ষ্ঠ শক্তি।
রুমেক্স ইয়োলো ডক নামক গাছড়া, একটি অবহেলিত ঔষধ এবং ইহাকে মাত্র আংশিকভাবেই পরীক্ষা করা হইয়াছে। মানসিক লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় নাই; পরীক্ষাকারিগণ সর্দিজ লক্ষণগুলি সুন্দরভাবে প্রকাশ করিয়াছেন।
একপ্রকার বিষাদভাব বর্তমান থাকে, রোগী বিমর্ষচিত্ত, তাহার বিষয়কৰ্ম্মে বিতৃষ্ণা থাকে, উত্তেজনাপ্রবণ, মানসিক উত্তেজনাপ্রবণতা। আমরা মানসিক লক্ষণগুলি সম্বন্ধে এইটুকুই জ্ঞাত আছি কারণ ইহার পরীক্ষা নিম্নক্রম ঔষধ ও মূল অরিষ্ট সাহায্যেই করা হইয়াছিল। ইয়োলো ডক ঔষধটি পারিবারিক চিকিৎসায় রক্তের দোষ দূর করিবার জন্য এবং উদ্ভেদ ও ফোড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এইভাবে ব্যবহৃত হইলে ইহা একটি স্নিগ্ধ পদার্থ এবং উহার পরীক্ষাও কতকটা ঐভাবেই হইয়াছে।
ইহার সর্দি জন্মাইবার প্রবণতা বিশেষ লক্ষণীয়। নাসিকা, চক্ষু, বক্ষ এবং কণ্ঠ, সমগ্র বায়ুপথ হইতে প্রচুর স্রাব, প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাব হয়। আমি নাক হইতে এরূপ স্রাব হইতে দেখিয়াছি যে, উহা একটি অবিরাম ধারা বলিয়া মনে হইয়াছিল, কণ্ঠ ও বায়ুনালী হইতে প্রচুর স্রাব হইতেছিল, এবং রোগী গলা খেঁকারি দিয়া একমুখ করিয়া, পাতলা ফেনা ফেনা সাদা শ্লেষ্মা তুলিতেছিল, ফলে অল্পক্ষণের মধ্যেই পিকদানের মধ্যে অর্ধপাইট জলের মত পাতলা শ্লেষ্ম জমিয়া উঠিতেছিল। আবার ইহাতে কঠিন, শুষ্ক ও আক্ষেপিক কাশিবিশিষ্ট কণ্ঠনালীর ও কণ্ঠের শুষ্কতাও আছে।
সময়ে সময়ে ইহা ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকৃতিও গ্রহণ করে, তখন প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাব হয়, পাতলা, জলের মত, ফেনাফেনা শ্লেষ্মা একমুখ করিয়া উঠিতে থাকে। উহা প্রাথমিক অবস্থামাত্র। ইহার পর স্রাব ঘন হরিদ্রাবর্ণ, চটচটে ও চাপচাপ হইয়া উঠে, সাদা এবং আঠাল হয়, এত দড়ির মত ও আঠাল হয় যে, নাক ঝাড়িলে এবং কাশিলে উহা উঠিয়া আসে না। রোগী ঐ চাপচাপ, দড়ির মত, আঠাল এমন শিরিষের মত শ্লেষ্মা তুলিবার চেষ্টা করিতে করিতে সম্পূর্ণ অবসন্ন হইয়া পড়ে। এই সর্দিজ অবস্থার সহিত সাধারণতঃ প্রাতঃকালীন উদরাময় থাকে এবং এইগুলিই ঔষধটির পরিচালক লক্ষণ হয়।
“সর্দিজ শিরঃপীড়া তৎসহ কণ্ঠনালী ও কণ্ঠের অত্যন্ত উপদাহ, কণ্ঠাস্থিতে যন্ত্রণা এবং বক্ষাস্থির পশ্চাতে ক্ষততা।” সর্দিজ শিরঃপীড়ার প্রকৃতিই এরূপ যে, উহা শুষ্কতার আবেশের সহিত উপস্থিত এবং তারপর পর্যায়ক্রমে প্রচুর নিঃস্রাব হইতে থাকে। কণ্ঠনালী ও কণ্ঠে অত্যন্ত হাজাভাব, জ্বালা এবং চিড়িকমারা, সে গলগহ্বরে কোনরূপ চাপ সহ্য করিতে পারে না। গলগহ্বরে শুড়শুড় করে এবং তাহাতে কাশি জন্মে। না নড়িয়া বসিয়া থাকিতে হয়, গভীর নিশ্বাস লইতে পারে না, দ্রুত ও অনিয়মিতভাবে শ্বাস লইতে বাধ্য হয় কারণ শ্বাসক্রিয়ার কোনরূপ পরিবর্তনে জ্বালাভাব অত্যন্ত বাড়িয়া উঠে। যদি সে খোলা বাতাসে যায়, তাহা হইলে আবেশযুক্ত কাশি তাহাকে কাবু করিয়া ফেলে; যদি সে খোলাবাতাস হইতে উষ্ণগৃহে প্রবেশ করে, তাহা হইলেও ঐ একই প্রকার আবেশযুক্ত কাশি দেখা দেয়। কাশির আবেশ এত প্রবল হয় যে, প্রাতঃকালে যখন তাহার মল পাতলা থাকে তখন উহা কাশির ধমকে অসাড়ে ত্যাগ করিয়া ফেলে। কাশির সহিত মূত্রও নির্গত হয়। যখন স্রাব কমিয়া আসে তখন শিরঃপীড়াও পুনরাগত হয়।
একটি বিশেষ লক্ষণীয় লক্ষণ কাস্থির নিম্নে যাতনা, কাস্থির নিম্নে একপ্রকার হাজাবোধ, মনে হয় যেন অভ্যন্তরের যন্ত্রগুলি হাজিয়া গিয়াছে, যেন গৃহীত বায়ু ঠিক কষ্ঠাস্থির নিম্নেই উপস্থিত হইয়া হাজাভাব ও জ্বালার সৃষ্টি করিতেছে। শ্বাসবায়ু গ্রহণ করিলে হাজাভাব ও জ্বালা।
“নাসিকা অবরুদ্ধ, শুষ্কতার অনুভূতি, এমনকি নাসিকার পশ্চাত্রন্ধেও শুষ্কতার অনুভূতি।” অনেক সময়ে সর্দি দেখা দিবার সময় নাসিকার পশ্চাত্রন্ধ্রে স্পষ্ট শুষ্কতাবোধ থাকে, সেইজন্য তাহাকে অবিরত গলায় খেঁকারি দিতে হয়, উপদাহ এতই অধিক থাকে যে, সে উহা অগ্রাহ্য, করিতে পারে না। নাক হইতে গলকোষ পৰ্য্যন্ত স্থানে পুরু হইয়া যাওয়ার অনুভূতি জন্মে, সে উহা হইতে নিষ্কৃতি পাইবার জন্য একপ্রকার অদ্ভুত শব্দ করিতে থাকে। “নাসিকার অভ্যন্তরস্থ। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে হঠাৎ তীব্র চিনচিন করিতে থাকার ন্যায় অনুভূতি।” উহা তীব্র হইয়া উঠে, চিনচিনকরা সময়ে সময়ে নাসিকাপ্রান্ত হইতে গলকোষ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, উহাকে একপ্রকার চুলকানি বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে, সময়ে সময়ে উহার জন্য হাঁচি হয়, নাক ঝাড়িতে হয়, সে পূর্বোক্ত প্রকার অদ্ভুত শব্দ করে, এবং যখন শ্লেষ্ম গলকোষের সামান্য নিম্নে থাকে, তখন খেঁকারি দিয়া উহা তুলিতে চেষ্টা করে, উহা কণ্ঠনালীতে থাকিলে গলা ঝাড়িয়া উহা হইতে নিষ্কৃতিলাভের চেষ্টা করে। প্রদাহে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুনালীগুলি আক্রান্ত হয়, ফলে ক্যাপিলারী ব্রঙ্কাইটিস এবং অবশেষে নিউমোনিয়া জন্মে।
ইহা তরুণ ও পুরাতন উভয়প্রকার সর্দির পক্ষেই উপযোগী। পুরাতন যক্ষ্মারোগের রোগীরা, যতবারই তাহাদের ঠান্ডা লাগে, ততবারই তাহারা ঠান্ডা বাতাসে এবং বায়ুর পরিবর্তনে এত অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া উঠে, যে, শয্যাবস্ত্র দিয়া মুখ ঢাকিয়া শয়ন করে। প্রত্যেকটি বায়ুস্রোতেই একপ্রকার আক্ষেপিক কাশি উপস্থিত হয়। প্রথম প্রথম গয়ের পাতলা থাকে, এবং ক্রমে উহা ঘন ও আঠার মত হইয়া পড়ে, সে উহা তুলিয়া ফেলিতে পারে না সে একপ্রকার ঘড়ঘড় শব্দ শুনিতে পায় এবং বহু চেষ্টার পর, অবসন্ন হইয়া একটুখানি গয়ের তুলে কিন্তু তাহাতে উপশম হয় না। ইহা যক্ষারোগে সাময়িক উপশম দেওয়ার পক্ষে একটি বড় ঔষধ। ক্ষততা, হাজাভাব, এবং জ্বালা, বিশেষতঃ গলকোষের নীচে এবং বক্ষাস্থির পশ্চাতে।
“গড়ান সর্দির সহিত ভীষণ হাঁচি, সন্ধ্যাকালে ও রাত্রে বৃদ্ধি।” অনেক লক্ষণ সন্ধ্যাকালে বৰ্দ্ধিত হয়। গড়ান সর্দি, তৎসহ হাঁচি এবং শিরঃপীড়া, সন্ধ্যাকালে ও রাত্রে বৃদ্ধি। কতকগুলি লক্ষণ ভোরের দিকে বাড়ে। এক এক প্রকার কাশি রাত্রি ১১টার সময় বাড়ে। ল্যাকেসিস এবং রুমেক্স এইরূপ কাশির জটিলতা দূর করে কিন্তু ঔষধ দুইটির প্রত্যেকটিকেই বুঝিতে হইবে।
ল্যাকেসিসে’ শিশুরা প্রথম ঘুমে কাশে কিন্তু যদি তাহাদিগকে জাগাইয়া রাখা যায়, তাহা হইলে তাহারা আর কাশে না। সুতরাং ‘ল্যাকেসিসের রাত্রি ১১টার সময়কার কাশি, নিদ্রা হইতে বৃদ্ধিজনিত ব্যাপার। রুমেক্স শিশু ঘুমাক বা না ঘুমাক, কাশিটি ১১টার সময় আসিবেই। নাসিকার পশ্চাত্রন্ধ্রে সেঞ্চয়।” “নাসিকার পশ্চার হইতে হরিদ্রাবর্ণ শ্লেমাস্রাব।” “নাসিকা হইতে রক্তপাত, ভীষণ হাঁচি এবং নাসারন্ধ্রের যন্ত্রণাদায়ক উপদাহ।” “ইনফ্লুয়েঞ্জা, তত্সহ ভীষণ সর্দি, তারপর ব্রঙ্কাইটিসের আক্রমণ।” “অবিরত গলা চাচিতে থাকা।” সর্দিজ অবস্থা কণ্ঠনালী ও কন্ঠ পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হউক বা না হউক, এই প্রকার অবিরত গলা উঁচিতে থাকা বর্তমান থাকে। স্বরভঙ্গযুক্ত, কথা বলিতে পারে না, কারণ স্বররজ্জ্বগুলি আঠার মত শ্লেষ্ময় আবৃত থাকে। অনেক পুরাতন রোগী ইহা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। ফসফরাসে’ও এইরূপ স্বরভঙ্গ আছে কিন্তু সে স্বরভঙ্গ স্বররক্ষ্ম হইতে একটুখানি গয়ের ঘেঁকারি দিয়া তুলিয়া ফেলিতে পারিলে বিশেষভাবে উপশমিত হয়। কষ্টিকামে’র স্বরভঙ্গ স্বররঞ্জুর দুর্বলতার জন্য হইয়া থাকে। ফসফরাসে’ একপ্রকার প্রদাহিত অবস্থা বর্তমান থাকে এবং অবিরত শ্লেষ্মাসঞ্চয়ের জন্য কথা বলায় বাধা পড়ে। রুমেক্স শক্ত, আঠাল শিরিষের ন্যায় শ্লেষ্মাসঞ্চয় হয় এবং রোগী অবিরত কণ্ঠনালী চাচিতে থাকে।
“গলায় একটি পিন্ড থাকার ন্যায় অনুভূতি, উহা গলা ঝাড়িলে বা ঢোক গিলিলে উপশমিত হয় না, গলাধঃকরণ করিলে একটুখানি নামিয়া যায় কিন্তু তৎক্ষণাৎ আবার ফিরিয়া আসে; ইহা ‘ল্যাকেসিসে’রও একটি বড় লক্ষণ। কণ্ঠনালীতে যাতনা, তৎসহ গলগহ্বরে আঠার মত শ্লেষ্মসঞ্চয় ” “গলা ও গলগহ্বরের সর্দি।” এই ঔষধে দুর্দান্ত সৰ্দিরোগের বিভিন্ন অবস্থা দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু ইহা, বিশেষভাবে সেই সকল ধাতুর পক্ষে উপযোগী, যাহাদের অবিরত সর্দি লাগে, যাহারা আবহাওয়ার পরিবর্তনে পীড়িত হইয়া পড়ে, আগুনের কাছে থাকিলেও কাঁপিতে থাকে, যথেষ্ট গাত্রাবরণ চায়, এমনকি মাথাটিও ঢাকিয়া রাখিতে চায়।
অনেক রোগ সন্ধ্যাকালে বাড়ে, স্নান করিলে বাড়ে, ঠান্ডা লাগিলে বাড়ে, ঠান্ডা বায়ুতে শ্বাস লইলে বাড়ে। বাতজ উপসর্গ থাকা একটি সাধারণ ব্যাপার এবং উহা ঠান্ডাতেই বাড়ে। প্রত্যেকবার ঠান্ডা পড়িলেই সন্ধিগুলি আক্রান্ত হয়। ইহা ক্যাল্কেরিয়া ফসের একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ;—প্রত্যেকবার বায়ুমন্ডলের ঠান্ডায় পরিবর্তন সন্ধিগুলিতে অনুভূত হয়, স্নান করিলে, তারপর শীতার্ত হইলেও ঐরূপ হয়।
“উদরোর্ধপ্রদেশ হইতে পৃষ্ঠের মধ্য দিয়া টানিয়া ধরার মত শ্বাসরোধক, ভারভাববিশিষ্ট কনকনানি পোষাক অত্যন্ত আট বোধ হয়, উদরোদ্ধপ্রদেশে দুর্বলতাবোধ, কথা বলিলে সবকিছুর বৃদ্ধি, রোগী মাঝে মাঝেই দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করে।” “পাকস্থলী গহ্বর হইতে বক্ষ পৰ্য্যন্ত তীরবৎ যন্ত্রণা, বাম বক্ষে তীব্র যন্ত্রণা, অল্প অল্প বমনবেগ, কপালে অপ্রবল কনকনানি।” “পাকস্থলীগহ্বর হইতে বক্ষ পৰ্য্যন্ত তীরবৎ যন্ত্রণা, বাম পক্ষে তীব্র যন্ত্রণা, অল্প অল্প বমনবেগ, কপালে অপ্রবল কনকনানি।” “পাকস্থলীগহ্বরে কনকনানি এবং তীরবৎ যন্ত্রণা, উহার উপরে বক্ষাস্থির উভয় পার্শ্বে অনুরূপ যন্ত্রণা।” পাকস্থলী খাদ্য অথবা অতি সাধারণ খাদ্যও হজম করে, অন্যান্য স্থানের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর ন্যায় পাকস্থলীর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে আক্রান্ত হয়। পাকস্থলীতে নানাপ্রকার যন্ত্রণা কনকনানি, পাকস্থলীগহ্বরে তীরবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। “পাকস্থলীগহ্বরে কনকনানির ন্যায় যন্ত্রণা, উহা ক্রমশঃ তীব্র হইয়া উঠে, পাকস্থলীতে তীব্র সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা, উহা বক্ষ পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হয়, নিম্নে পাকস্থলীগহ্বরে একটি পিন্ড থাকার ন্যায় চাপবোধ, উহা সময়ে সময়ে বক্ষাস্থির নিম্ন পর্যন্ত উঠে, সঞ্চালনে অত্যন্ত বৃদ্ধিযুক্ত হয়, দীর্ঘশ্বাস লইলে কিছু পরিমাণে বৃদ্ধিযুক্ত হয়, সাধারণতঃ আহারের পর বাড়ে, সম্পূর্ণ স্থির হইয়া শুইয়া থাকিলে উপশমিত হয়।” পাকস্থলীলক্ষণ কথা বলিলে বাড়ে, ইহা অদ্ভুত মনে হয়। কথা বলিলে, হাঁটিলে, ঠান্ডা বায়ুতে নিশ্বাস লইলে পাকস্থলী ক্ষতযুক্ত বোধ হয়, এবং লক্ষণগুলি বাড়ে, সে গরম জিনিষ চায়। অত্যন্ত বায়ুস্ফীতিযুক্ত থাকে, বায়ুস্ফীতির জন্য যন্ত্রণা হয়, যন্ত্রণা উদ্গার ও অধঃবায়ুতে উপশমিত হয় (কার্বো ভেজ’)। পাকস্থলী ও উদরের যন্ত্রণা কথা বলিলে ও অনিয়মিত শ্বাস গ্রহণ করিলে বাড়ে; সে চেয়ারে বসিয়া সম্পূর্ণ নিয়মিতভাবে শ্বাস গ্রহণ করিতে বাধ্য হয়। অনিয়মিত শ্বাসগ্রহণে কাশি বা শ্বাসরোধভাব উপস্থিত হয়।
‘সালফারের ন্যায় প্রাতঃকালে মলত্যাগ করিতে ছুটিতে হয়। “মল যন্ত্রণাশূন্য, দুর্গন্ধ, প্রচুর বাদামিবর্ণ অথবা কাল, পাতলা অথবা জলের ন্যায়, মলত্যাগের পূর্বে উদরে যন্ত্রণা হয়, মলত্যাগের পূর্বে অকস্মাৎ মলবেগ দেখা দেয়, সেজন্য তাহাকে দ্রুত শয্যাত্যাগ করিতে হয়। “প্রাতঃকালীন উদরাময়, তৎসহ গলগহ্বরে সুড়সুড় করার জন্য কাশি।” যক্ষ্মারোগীদের পক্ষে প্রাতঃকালীন উদরাময় থাকা একটি সাধারণ ব্যাপার, এবং তাহাদের অনেককেই ‘সালফারের ন্যায় দেখায়। যদি প্রাতঃকালীন উদরাময়ের মল বেগে নির্গত হয় তাহা হইলে রুমেক্স সাময়িক উপশম দিবে, উহা ফুসফুসের অত্যনুভূতিপ্রবণতা কমাইয়া আনিবে, রোগীর ঠান্ডায় অত্যনুভূতি দূর করিবে এবং রোগীকে কতকটা সুস্থ করিয়া তুলিবে। রুমেক্স ‘সালফারের ন্যায় গভীরক্রিয় ঔষধ নহে, কিন্তু তাহা হইলেও উহা একটি এন্টিসোরিক। অবশ্য, ইহার ক্রিয়া প্রাথমিক অবস্থাতেই সীমাবদ্ধ, পুরাতন রোগীকেও কিছুটা অগ্রগতি দিবে কিন্তু তারপর অপর একটি এন্টিসোরিকের প্রয়োজন হইবে। ইহার পর ক্যাল্কেরিয়া’ ভাল খাটে।
রুমেক্স স্নানে এবং রাসে’র ন্যায় ঠান্ডা পারিপার্শ্বিকে অত্যনুভূতিযুক্ত কিন্তু ইহার বৃদ্ধি সঞ্চালনে। সঞ্চালনে বৃদ্ধি ও কথা বলায় বৃদ্ধি হইতে ইহার সহিত ব্রায়োনিয়া’র গোলযোগ উপস্থিত হইতে পারে, কিন্তু ব্রায়োনিয়া শীতল বাতাসে অত্যনুভূতিযুক্ত নহে, বরং উহা সময়ে সময়ে শীত বাতাসে উপশম বোধ করে এবং গরম ঘরে খারাপ হয়, ঘর শীতল হইলে উহার রোগলক্ষণগুলি উপশমিত হয়। রুমেক্স স্নায়ুসমূহ খোলা বাতাসে অত্যনুভূতিযুক্ত থাকে, নাক্সের ন্যায় খোলা বাতাসে স্পষ্ট স্নায়বিক অত্যনুভূতি বর্তমান থাকে।
“বাদামিবর্ণের জলবৎ উদরাময়, বিশেষতঃ প্রাতঃকালে, ভোর ৫টা হইতে সকাল ৯টা পৰ্য্যন্ত মলত্যাগ হয়।” ইহা একজন সত্তর বৎসর বয়স্ক বৃদ্ধের গুরুতর উদরাময়ের আক্রমণ ‘সালফার’ বিফল হইবার পর আরোগ্য করিয়াছিল। সালফারের রোগী কাশি থাকিলে, বিশেষতঃ যক্ষ্মারোগযুক্ত হইলে, সাধারণতঃ ঠান্ডা বাতাস, স্নিগ্ধকর দ্রব্যাদি চায়; যদিও সময়ে সময়ে তাহার পাকস্থলীলক্ষণ উষ্ণ পানীয়ে উপশমিত হয়, তথাপি সে ঠান্ডা ও স্নিগ্ধকর বায়ুই পছন্দ করে।
“ঠান্ডা লাগার পর স্বরনাশ।” “গলা অথবা গলনালীতে আঠাল শ্লেষ্মা, অবিরত গলা খেঁকারি দেওয়ার প্রবৃত্তি।” “গলগহ্বরে সুড়সুড় করা, উহাতে কাশি উদ্ৰিক্ত হয়।” সে জ্বালা ও হাজাভাবের জন্য যতক্ষণ পায়ে কাশি চাপিয়া রাখে। অতি তীব্র সর্দির মধ্যে ব্রায়োনিয়া’, ‘রাস’ বা একোনাইটে’র ন্যায় কোনরূপ জ্বর থাকে না। ইহাতে ধাতুগত লক্ষণসমূহ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কনকন করা, সর্বাঙ্গীণ ক্ষততাবোধ, প্রবল জ্বর, তৃষ্ণা প্রভৃতি লক্ষণ নাই। আক্রমণটি বিশেষস্থানেই সীমাবদ্ধ থাকে।
“স্বরভঙ্গযুক্ত ঘংঘং করা কাশি, আক্রমণ প্রতিরাত্রে ১১টার সময় এবং রাত্রি ২টা ও ৫টায় (শিশুদিগের)।” “কাশির সহিত বক্ষাস্থির মধ্যস্থলের পশ্চাতে যন্ত্রণা।” “শয়নের কয়েক মিনিট পরে এবং রাত্রে অতি ভয়ঙ্কর কাশির উদ্রেক হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বরনাশ থাকে।”
“স্ত্রীলোকদিগের প্রতিবার কাশির ধমকে কয়েক ফোটা মূত্রপাত হইয়া যায়।”
যক্ষ্মারোগের অগ্রবর্তী রোগীদিগের পক্ষে রুমেক্স একটি মূল্যবান উপশমকর ঔষধ। অনেক সময়ে ইহা রোগীকে এক শীত হইতে আর এক শীত পৰ্য্যন্ত ভাল রাখে। যক্ষ্মারোগীর শেষ কয়েক বৎসর তোমরা রুমেক্স, পালসেটিলা’, ‘সেনেগা’, আর্সেনিক ও নাক্স ভমিকা দ্বারা তালি দিয়া রাখিতে পারিবে। যক্ষ্মারোগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে, উদরাময় দেখা দেয়, আমি তোমাদিগকে সে সম্বন্ধে সতর্ক করিয়া দিতেছি। তোমরা দেখিবে যে, এসেটিক এসিড’কে যক্ষ্মারোগীর উদরাময়ের জন্য অনুকূল বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। যদি উহা খুব প্রবল না হইয়া উঠে, তাহা হইলে ঐ উদরাময়কে অত্যন্ত দুর্বলকর হয়, তাহা হইলে এইটির মত খুব সাধারণ ঔষধ উহার উপশমার্থে ব্যবহার করিবে। কিন্তু অধিকাংশ যক্ষ্মারোগীই সামান্য উদরাময় প্রাতঃকালীন পাতলা মলে ভাল থাকে। নিশাঘর্ম সম্বন্ধেও ঐ একই কথা। যদি তাহার উহা না। থাকে, তাহা হইলে উহার চেয়ে তীব্রতর কিছু থাকিবে। এলোপ্যাথগণ এইরূপ উদরাময় ও নিশাঘৰ্ম্ম থামাইয়া থাকেন কিন্তু তারপর ফলস্বরূপ যে যাতনা উপস্থিত হয়, তজ্জন্য তাহাদিগকে রোগীকে মফিন’ খাওয়াইতে হয়। এই বাহ্যিক লক্ষণ, এই বহিঃপ্রকাশগুলিকে তোমরা যতই উপশমিত করিতে চেষ্টা করিবে, ততই রোগীরও অপকার করিবে, এবং যদি তোমরা এইভাবে চল, তাহা হইলে তোমাদিগকে হোমিওপ্যাথি ত্যাগ করিয়া রোগীকে ‘মর্ফিন’ দিতে হইবে কিন্তু। তাহা একটি অপরাধ।
তোমরা এইরূপ যক্ষ্মারোগীর সর্বাঙ্গীণ ক্ষততাবোধ ও থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় যন্ত্রণা ‘আর্নিকা দ্বারা দূর করিবে এবং উহাই তাহার কাশি, গলরোধ এবং উকি উঠার পক্ষে উপযোগী হইবে এবং তাহাকে ঘুম পাড়াইয়া রাখিবে। পরবর্তী অবস্থায় হাড়ের মধ্যে কনকনানি ও কষ্টকর কাশির জন্য ‘পাইরোজেন প্রয়োজন হইতে পারে। তোমাকে বৎসরের পর বৎসর তাহাকে তালি দিয়া রাখিতে হইবে; সময়ে সময়ে আর্সেনিক ঔষধ হইতে পারে। কিন্তু উহাকে অপেক্ষাকৃত ঘন ঘন দিতে হইবে; সময়ে সময়ে লাইকোপোডিয়াম’, ‘পালসেটিলা’, ‘পাইরোজেন অথবা আর্নিকা’ ঔষধ হইতে পারে। এই ঔষধগুলি রোগীকে বাঁচিয়া থাকিবার পক্ষে সাহায্য করিবে। এই ঔষধগুলিকে মাঝে মাঝে পরিবর্তিত করিতে হইবে কিন্তু অবশেষে রোগী ভাঙ্গিয়া পড়িবে, এবং এসব ঔষধে আর কাজ করিবে না। একপ্রকার ভয়ানক শ্বাসকষ্ট ধীরে ধীরে রোগীকে আক্রমণ করে, তাহার বাতাস পাইবার আকাক্ষা জন্মে; তাহার শ্বাসগ্রহণে স্থান সঙ্কীর্ণ হইয়া পড়ে। হাতেপায়ে শোথ দেখা দেয়। হৃৎপিন্ড ‘বিকল হইয়া পড়ে, শীর্ণতা দেখা দেয়, চেহারা মৃতের ন্যায় হইয়া পড়ে, ঠান্ডা ঘর্ম হইতে থাকে, মুখ নীল অবস্থাতেও তোমরা ‘টেরেন্টুলা কিউবেনসিস দ্বারা উপশম দিতে পারিবে। সময়ে সময়ে উহা পুনঃপুনঃ প্রয়োগ করিতে হয়। * উহা অনেকদিন যাবৎ উপশম দিবে, সহজ মৃত্যুর উপায় করিয়া দিবে, ইহা মফিয়া’ দ্বারা যে ইন্দ্রিয়বৃত্তির অসাড়কারী বিমূঢ় অবস্থা উপস্থিত হয় তাহা নহে, কিন্তু ইহা প্রকৃত উপশম। ‘
অপর নাম – ইয়োলো ডর্ক (Yellow Dock)
কারলড ডক (Curid ock)
ইহা পলিগোনেসী জাতীয় উদ্ভিদ। এর সরস মূল থেকে অরিষ্ট তৈরী করা হয়।
রিউমেক্সের মূলকথা
১৷ অবিরাম প্রবল শুকনো কাশি; সামান্য ঠাণ্ডা হাওয়াও প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে বৃদ্ধি; ঠাণ্ডা বাতাস যাতে ভিতরে না যেতে পারে, তার জন্য রোগী মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে বৃাখে এবং তাতে শান্তি পায়।
২। বাদামী বর্ণের উদরাময়, প্রাতে বৃদ্ধি।
৩। শুতে যাওয়ার সময় যখন কাপড় ঘড়া হয়, তখন চৰ্ম্মের অসহ্য চুলকানি।
রিউমেক্স — পরিক্রমা
১। তিনটি স্থানে, যথা – শ্বাসযন্ত্র, অন্ত্র ও ত্বকে এই ঔষধটির সুস্পষ্ট ক্রিয়া দর্শে।
“প্ৰবল, অবিরাম কাশি, শুষ্ক ও ক্লান্তিকর কাশি, তার সঙ্গে অতি অল্প শ্লেষ্মা উঠে বা একেবারেই উঠে না। বৃদ্ধি হয় চাপে,কথা বলায় এবং বিশেষ করে ঠাণ্ডা হওয়ায় শ্বাস গ্রহণ এবং রাত্রে (ডানহ্যাম)।বোস হয় আর কোন ঔষধেই কণ্ঠনালী ও স্বরযন্ত্রের ঝিল্পীর এত অধিক অনুভূতি সপতা নেই। বায়ুর সংস্পর্শ থেকে বাঁচবার জন্য রোগীকে বিছানায় শোয়ার সময় মাথা ঢেকে রাখতে হয়, অন্যথায় হাওয়া লাগলেই তার কাশির উদ্রেক হয়।
ফসফরাস ও স্পঞ্জিয়ার মত আরো কয়েকটি ঔষধে ঠাণ্ডা হাওয়ায় শ্বাসগ্রহণে কাশির বৃষ্টি আছে কিন্তু রুমেক্সের মত এত সুস্পষ্টভাবে কোনটিতেই বৃদ্ধি হতে দেখা যায় না। গরমঘর থেকে ঠাণ্ডা হওয়ায় গেলে এবং ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে গরঘরে গেলে কাশি বাড়ে রিউমেক্সের লক্ষণ।
* ব্রায়োনিয়া ও নেট্রাম কাৰ্ব্বে -এর বিপরীত লক্ষণ দৃষ্ট হয়। যে সুড়সুড়ি থেকে কাশির উদ্রেক; হয়, তা গলগহ্বরে (throat pit), বক্ষাস্থির উপরিস্থ গহ্বরে (Supra-sternal fossa) অথবা বক্ষাস্থির পচাগের নিম্নদেশ থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত স্থানে অবস্থিত এবং সেখানে একপ্রকার ক্ষততাবোধ (soreness) ও অকরণের (rawness) অনুভূতি থাকে (কষ্টিকাম)।আবার আমরা একে বাঁ দিকে স্তনবৃন্তের ঠিক নীচে বা দিকের ফুসফুসের ভিতর দিয়ে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনাসংযুক্ত কাশিতেও ফলপ্রদ হতে দেখেছি (নেট্রাম সালফ)। ২। রিউমেক্সের উদরাময়ও প্রাতঃকালেই আরম্ভ হয় বলে ইহা (নেট্রাম সালফ) সালফার ও পডোফাইলামের সদৃশ, কিন্তু এর উদরাময়ের বর্ণ বাদামী এবং তার সঙ্গে কাশি থাকে।
৩। চর্মের একপ্রকার উদ্ভেদ রিউমেক্স দ্বারা আরোগ্য হয়। এক্ষেত্রে এক চরিত্রগত লক্ষণ হল, অত্যন্ত চুলকানি এবং তা প্রকাশ পায় শুতে যাওয়ার সময় কাপড় ছাড়তে গেলে। এই উড়ে ফোস্কার মত অথবা প্রায়রি তৃণভূমির চুলকানির মত (like army or prairie itch) অথবা আমবাতের মত। কাপড় ছাড়ার সময় চুলকানি নেট্টাম সালফিউরিকাম ও গুলিয়েণ্ডারেও দেখা যায়। কিন্তু নেট্রামে এই চুলকানি জণ্ডিস বা ম্যালেরিয়ার লক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে। তবে যদি আমরা গায়ের দারুণ চুলকানি পাই এবং তা বিশেষ করে বিম্বনার গরমে বাড়ে, তাহলে মারকিউরিয়াস সলিবিউলিস বা প্রটো-আয়াডাইড ব্যবস্থেয়।